Probas Report
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১

চিয়া চাষে ঝিনাইদহে ইউনানী চিকিৎসকের সফলতা

প্রবাস রিপোর্ট ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০৭:৫১ পিএম চিয়া চাষে ঝিনাইদহে ইউনানী চিকিৎসকের সফলতা

জেলার হরিণাকুন্ডুতে শিতলী গ্রামে ডা. রাজিবুল ইসলাম নামে এক ইউনানী চিকিৎসক ২৯ শতক জমিতে এ বছর পরীক্ষামুলক ভাবে পুষ্টিগুন সম্পন্ন চিয়া চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তিনি ওই গ্রামের আবু বকর মাষ্টারের ছেলে। চিকিৎসক রাজিবের ক্ষেতে চিয়া চাষ এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। 

মেক্সিকো ও আমেরিকার ঔষুধিগুন সম্পন্ন চিয়া চাষ হরিণাকুন্ডু অঞ্চলের মাটিতে বাম্পার ফলনে কৃষকদের মাঝে এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। অনেক কৃষক এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানান রাজিব। মেক্সিকোসহ ইউরোপের দেশগুলোতে চিয়া একটি ঔষধি ফসল হিসেবে চাষ হয়। এর বৈজ্ঞনীক নাম সালভিয়া হিসপানিকা। ২০১৭ সালে দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন গ্রামে চিয়া’র প্রথম চাষ শুরু করেন কৃষক নুরুল আমিন। তার দেখাদেখি সারা দেশেই কমবেশি এই চাষ শুরু হয়েছে। ডাঃ রাজিবুল অনুপ্রাণিত হয়ে চিয়া চাষ শুরু করেছেন। 

জানা গেছে, মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ হচ্ছে চিয়া সিড বা বীজ। যার আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসী অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় থাকা চিয়া সিডকে তারা সোনার থেকেও মূল্যবান মনে করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন এটা তাদের শক্তি ও সাহস জোগাবে। সব ধরনের আবহাওয়ায় জন্মানো চিয়া সিড দেখতে সাদা ও কালো রঙের তিলের মতো ছোট সাইজের হয়ে থাকে। অনেকেই চিয়া সিডকে তোকমা বলে ভুল করে থাকে। দেখতে প্রায় একই রকম হলেও জন্মস্থান, পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে রয়েছে কিছু পার্থক্য। চিয়া সাধারণত তিন মাসের ফসল। অক্টোবর মাসে বীজ রোপন করতে হয়। ৩৩ শতকের বিঘায় মাত্র তিন’শ গ্রাম বীজ লাগে। চাষ পদ্ধতিও খুব সহজ। 

হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার হাফিজ হাসান আগামীনিউজকে জানান, ঔষুধি গুন থাকায় চিয়া একটি লাভ জনক চাষ। হরিণাকুন্ডুর শিতলী গ্রামের রাজিবুল ও চাঁদপুরের জিল্লুর রহমান এই চাষ শুরু করছেন। কৃষকরা ব্যাপক ভাবে এই চাষে ঝুকে পড়লে অন্যান্য ফসলের উপর থেকে চাপ কমবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের আবহওয়া ও মাটি চিয়া চাষের জন্য উপযোগী। হরিণাকুন্ডু কৃষি বিভাগ চিয়া চাষে কৃষকদের সব ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। 

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ইউনানী মেডিকেল অফিসার ডাঃ আসমাউল হুসনা জানান, সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক এবং ক্যাফিক এসিড নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট। রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, দ্রবনীয় এবং অদ্রবণীয় আঁশ। তিনি জানান, এক আউন্স চিয়াা বীজে রয়েছে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৮.৫ গ্রাম ফ্যাট, ১১ গ্রাম ফাইবার, ১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (যার মধ্যে ১১ গ্রাম হল ফাইবার)। দৈনিক এক আউন্স চিয়া বীজ খেলে ১৮% ক্যালশিয়ামের চাহিদা, ২৭% ফসফরাসের চাহিদা এবং ৩০% ম্যাঙ্গানিজের চাহিদা পূরণ হতে পারে। বর্তমানে চিয়া সিড শুধু ওজন কমানোর জন্য বা ডায়েটের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না। নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে চিয়া সিড সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত। 

ইউনানী চিকিৎসক ডাঃ রাজিবুল ইসলাম আগামী নিউজকে জানান, সুপার চিয়া সিডের উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। দেহের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী, ওজন কমানো, ব্যাড সুগার স্বাভাবিক রাখা, হাড়ের ক্ষয়রোধ, প্রচুর পরিমানে ফাইবার সমৃদ্ধ চিয়া সিড মলাশয় পরিষ্কার রাখে ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, চিয়া সিড প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে। চিয়া সিডে থাকা অ্যামিনো এসিড ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে, চিয়া বীজ ক্যান্সার রোধ করে, শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে হজমে সহায়তা করে। এতে থাকা উচ্চমাত্রার ক্যালশিয়াম হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যাথা দূর করে। এটি খেলে ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। এতে প্রচুর মাত্রায় ওমেগা থ্রি থাকার কারণে আমাদের শরীরের কোলেস্টরল কে কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। 

তিনি আরো জানান, চিয়া বীজ নিয়ে যে কেও তার সঙ্গে পরামর্শ করতে ঝিনাইদহ শহরের ইসলামী ব্যাংক কমিউনিট হাসপাতাল সংলগ্ন তার বিকল্প চিকিৎসা কেন্দ্রে আসতে পারেন। 

Side banner