Probas Report
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১

ড্রোন বিধ্বস্ত: সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া

প্রবাস রিপোর্ট | অনলাইন ডেস্ক মার্চ ১৬, ২০২৩, ০৩:৪৮ পিএম ড্রোন বিধ্বস্ত: সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া

রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সংঘর্ষে গতকাল মঙ্গলবার কৃষ্ণসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় আগে ইউক্রেনে মস্কোর সর্বাত্মক অভিযান শুরুর পর থেকে দৃশ্যত এখন পর্যন্ত রুশ–মার্কিন বিবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ্য ঘটনা হয়ে উঠেছে এটি।

এ ঘটনা একই সঙ্গে যেমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, সেই সঙ্গে এক বিপৎসংকুল মুহূর্তও তুলে ধরেছে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) জন কিরবি বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে (যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে) বাধা দেওয়ার অন্যান্য ঘটনাও ঘটেছে। তবে ওই ঘটনা একেবারেই ভিন্ন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে (যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে) বাধা দেওয়ার অন্যান্য ঘটনাও ঘটেছে। তবে ওই ঘটনা একেবারেই ভিন্ন।

জন কিরবি, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার কৃষ্ণসাগরের ওপর দিয়ে রাশিয়ার দুটি এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমান ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি রিপার ড্রোন উড়ছিল। এ সময় একটি যুদ্ধবিমান ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ড্রোনের সামনে যায় ও এটির প্রপেলারে আঘাত করে।
এ বিষয়ে মার্কিন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা জেনারেল জেমস বি হেকার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তাঁদের ওই ড্রোন আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় নিয়মিত অভিযানে ছিল। তখন সেটিকে আঘাত করে রুশ যুদ্ধবিমান।’

এটি কি কোনো দুর্ঘটনা?
‘রাশিয়ার বিমানচালকদের নেওয়া পদক্ষেপের ভিত্তিতে এটি পরিষ্কার, ওই ঘটনা ছিল রাশিয়ার একটি অনিরাপদ ও অপেশাদার পদক্ষেপ’, বলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই পদক্ষেপ তাদের (রাশিয়ার) নিজেদের কথাই বলছে।’  

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী, রুশ যুদ্ধবিমান ইচ্ছাকৃতভাবে ড্রোনটির সামনে যায় এবং সেটির যাত্রাপথে কয়েকবার জ্বালানি তেল ফেলে। এরপর যুদ্ধবিমানটি ড্রোনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এ ঘটনা কি দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা বেড়ে যাওয়াকেই নির্দেশ করছে?

জন কিরবি ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভিওএ) বলেন, এ ঘটনার যদি এটিই বার্তা হয় যে রাশিয়া কৃষ্ণসাগরের আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা বা উড়োজাহাজের উড্ডয়ন প্রতিহত করতে বা এসব থেকে আমাদের নিবৃত্ত করতে চায়; তবে এ বার্তা ফলপ্রসূ হবে না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু মানবে না।

পেন্টাগন বলেছে, পুরো ঘটনার স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। জেনারেল রাইডার বলেন, এ সময়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি।

কিছু মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের ধারণা, রাশিয়ার এসইউ–২৯ যুদ্ধবিমানের যেটি সংঘর্ষে জড়িয়েছে, সম্ভবত সেটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি এ ইঙ্গিত করে, ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ছিল না।

‘আমি জানি, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ ঘটনাকে ঘিরে আমাদের উদ্বেগ সরাসরি রুশ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করছে’, বলেন জেনারেল রাইডার।

কৃষ্ণসাগরে মার্কিন ড্রোনের তৎপরতার ভবিষ্যৎ ও ইউক্রেনকে দেওয়া নজরদারিমূলক সহায়তার ক্ষেত্রে এ ঘটনার তাৎপর্য কি? উঠেছে এমন প্রশ্নও।

জন কিরবি মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভিওএ) বলেন, ‘এ ঘটনার যদি এটিই বার্তা হয় যে তারা (রাশিয়া) কৃষ্ণসাগরের আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা বা উড়োজাহাজের উড্ডয়ন প্রতিহত করতে বা এসব থেকে আমাদের নিবৃত্ত করতে চায়; তবে এ বার্তা ফলপ্রসূ হবে না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু মানবে না।’

বিস্ময়কর না হলেও রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোকে কৃষ্ণসাগরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনাকে যতটা সম্ভব কঠিন করে তুলবে।
অবশ্য ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ওয়াশিংটন এ পর্যন্ত শক্তভাবেই মুখ আটকে রেখেছে।

রুশ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দূরবর্তী অবস্থানে থাকা মার্কিন বিমানের পাইলটরা ড্রোনটিকে ভূপাতিত করতে বাধ্য হন।

ড্রোনটি কোথায় নামানো হয়েছে বা রুশ নৌবাহিনী এটিকে জব্দ করার চেষ্টা করছে কি না, সে বিষয়ে জেনারেল রাইডার কিছু বলেননি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু অডিও রেকর্ডিংয়ে দৃশ্যত এই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ড্রোনটি জব্দ করতে অভিযান চালাচ্ছে রুশ নৌবাহিনী। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এটি স্পষ্ট, রাশিয়ার হাতে এমন স্পর্শকাতর প্রযুক্তি গেলে ওয়াশিংটনের জন্য তা স্বস্তিদায়ক হবে না। আর ইউক্রেনের জন্য ‘যত দিন প্রয়োজন’ সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনে জন্য বর্তমান মুহূর্তটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

এসব ড্রোন শুধু পশ্চিমা অস্ত্রই নয়; এগুলো রাশিয়ার অভিযানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেও সহায়তা করছে ইউক্রেনকে।

কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌযানের চলাচল ও ইউক্রেনকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপসহ  রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রতিটি পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্যের এক বিশাল ভান্ডারও এসব ড্রোন।

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো টিকিয়ে রাখা থেকে শুরু করে নিজস্ব আক্রমণ পরিচালনার পরিকল্পনা পর্যন্ত নানা বিষয়ে কিয়েভ নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

অনিবার্য কারণেই মার্কিন কর্মকর্তারা এখন নজরদারি কার্যক্রমে বাড়তি কিছু যুক্ত করতে চাইবেন না। ওয়াশিংটন স্বাভাবিক নজরদারি কার্যক্রমই চালু রাখতে চাইবে। তবে শক্তি প্রয়োগ এড়ানো ও মস্কোর সঙ্গে আরও সরাসরি সংঘাতে যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে তার।    

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই নজরদারির কাজে কৃষ্ণসাগরের আকাশসীমায় রিপার ড্রোন দিয়ে অভিযান চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী রুশ জঙ্গি বিমানকে দোষারোপ করলেও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে ভিন্ন কথা। তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিমান কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি বা ড্রোনটির সংস্পর্শে আসেনি।

মস্কো বলেছে, রাশিয়ার অ্যারোস্পেস ফোর্সেসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে কৃষ্ণসাগরে একটি মার্কিন এমকিউ–৯ ড্রোন শনাক্ত করে। সেটি রুশ ফেডারেশনের সীমান্ত বরাবর এগোচ্ছিল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জন্য যে অস্থায়ী আকাশপথ তৈরি করা হয়েছে, তা সেটি লঙ্ঘন করছিল। তখন অনুপ্রবেশকারী ড্রোনটিকে চিহ্নিত করার জন্য জঙ্গি বিমান পাঠানো হয়। কিন্তু দ্রুত বাঁক বদল করতে গিয়ে এমকিউ–৯ ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং সাগরে গিয়ে পড়ে।

Side banner