বেইজিংয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ১৪/০২/২০২৩
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি প্রেসিডেন্ট শি-র আমন্ত্রণে তিন দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে মঙ্গলবার বেইজিং পৌঁছেছেন। গত ২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনও ইরানি প্রেসিডেন্ট চীন সফর করছেন।
ইরানি নেতার চীন সফর নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ, আমেরিকার তীব্র চাপের মধ্যে পড়া এই দুই দেশ গত বছরগুলোতে ক্রমাগত ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
দুই দেশ ২০২১ সালের মার্চ মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ বছরের কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে। আগামী ২৫ বছরে ইরানে ৪০,০০০ কোটি ডলার চীনা বিনিয়োগ হবে বলে লক্ষ্য ধার্য হয়েছে। ইরানের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অবকাঠামোর সর্বক্ষেত্রে চীনা বিনিয়োগ হচ্ছে। চীনা প্রকৌশলীরা সেখানে রাস্তা, সেতু, রেল লাইন নির্মাণ করছে।
ফলে, দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর চলবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ডিসেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্টের সৌদি আরব সফরের সময় উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট জিসিসির নেতাদের নিয়ে তার এক শীর্ষ বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় ইরানে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরপরই এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসলামিক রিপাবলিক কোনও দেশকে ইরানের ভৌগলিক সার্বভৌমত্বের অমর্যাদা করতে দেবে না।"
স্পষ্টতই তিনি অঙ্গুলি নির্দেশ করেন চীনের দিকে। তেহরানে চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এনে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে হয়ে পড়ে যে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং তার রিয়াদ সফর শেষে দেশে ফেরার এক সপ্তাহের মধ্যে চীনা ভাইস প্রিমিয়ার বা উপ-প্রধানমন্ত্রী হু চুনহুয়াকে তেহরান পাঠান।
তেহরানে গিয়েই ক্ষুব্ধ ইরানি নেতাদের আশ্বস্ত করতে মি. হু বিবৃতি দিয়ে বলেন, “ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চীন সবসময় পাশে থাকবে।"
২০২২ সালের ডিসেম্বরে রিয়াদে উপসাাগরীয় আরব দেশগুলোর নেতাদের সাথে শীর্ষ বৈঠক করেন শি জিনপিং
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, এবারে একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে ইরানকে আশ্বস্ত করতেই মি. রাইসিকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গেছেন শি জিন পিং। বেইজিংয়ের মধ্যপ্রাচ্য নীতিও হয়তো খোলাসা করে ব্যাখ্যা করা হবে তার কাছে।
লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সাময়িকী ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের সম্পাদক এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি বলেন, শি জিনপিংয়ের রিয়াদ সফরের সময় জিসিসি জোটের সাথে শীর্ষ বৈঠক নিয়ে তেহরান-বেইজিং সম্পর্কে যে “কালো ছায়া” পড়েছিল সেটি সরানোর চেষ্টা হচ্ছে।
“মি. রাইসির এই সফর তিন দিনের। এত লম্বা এক সফরে তাকে আমন্ত্রণ করে মি. শি স্পষ্টতই ইরানকে বোঝাতে চেয়েছেন আমরা কখনই তোমাদের সাথে সম্পর্ককে খাটো করে দেখছি না,” বলছেন মি. হামদি।
ইরান উদ্বিগ্ন কেন?
প্রেসিডেন্ট শির সৌদি আরব সফর নিয়ে কেন ক্ষুব্ধ হয় ইরান?
সৌদি আরব ইরানের এক নম্বর আঞ্চলিক শত্রু। কয়েক বছর ধরে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন। বছরের পর বছর ধরে এই দুই দেশ ইয়েমেনে রক্তাক্ত এক ছায়া-যুদ্ধে লিপ্ত।
কিন্তু, সামি হামদি বলেন, সৌদি আরবে সফর নয়, বরঞ্চ সমস্যা বাধে রিয়াদে জিসিসি নেতাদের সাথে মি. শির শীর্ষ বৈঠকের পর প্রকাশিত বিবৃতিটি নিয়ে।
ঐ বিবৃতিতে একাধিকবার ইরানের প্রসঙ্গ ছিল। সেখানে “শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির” জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। “প্রতিবেশীদের প্রতি মর্যাদাপূর্ণ নীতি অনুসরণে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর” আহ্বান জানানো হয়।
সেই সাথে, তিনটি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
“ঐ বিবৃতি প্রকাশের পর ইরানের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয় যে ইরানের ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলোর যেসব অভিযোগ, সেগুলো বেইজিং পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছে, এতেই তেহরান ক্ষুব্ধ এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে,” বলেন সামি হামদি।
আপনার মতামত লিখুন :