আজ ১০ আগস্ট, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৪ সালের আজকের এই দিনে নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম মেছের আলী ও মায়ের নাম মাজু বিবি। পিতা-মাতার দেওয়া আদুরে ডাকনাম ছিল লাল মিয়া।
বিশ্ব বরেণ্য এই চিত্রশিল্পীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- কোরআনখানি, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা পুষ্পমাল্য অর্পণ, দোয়া মাহফিল ও এস এম সুলতান আর্ট ক্যাম্পের উদ্বোধন।
সুলতানের ৭০ বছরের বোহেমিয়ান জীবনে তিনি তুলির আঁচড়ে দেশ, মাটি, মাটির গন্ধ আর ঘামে ভেজা মেহনতি মানুষের সঙ্গে নিজেকে একাকার করে সৃষ্টি করেছেন-পাট কাটা, ধানকাটা, ধান ঝাড়া, জলকে চলা, চর দখল, গ্রামের খাল, মৎস্য শিকার, গ্রামের দুপুর, নদী পারাপার, ধান মাড়াই, জমি কর্ষণে যাত্রা, মাছ ধরা, নদীর ঘাটে, ধান ভানা, গুন টানা, ফসল কাটার ক্ষণে, শরতের গ্রামীণ জীবন, শাপলা তোলা’র মত বিখ্যাত সব ছবি।
১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তার ছবি সমকালনী বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পলক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। সুলতানই একমাত্র এশিয়ান শিল্পী যার ছবি এসব শিল্পীদের ছবির সঙ্গে একত্রে প্রদর্শিত হয়েছে।
১৯৫৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রাবাসে থাকার পর ফিরে আসেন মাতৃভূমি নড়াইলে। ১৯৫৫ সালে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি পুরুলিয়ায় নন্দন কানন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কিছুদিন ছিলেন। ১৯৬৮ সালে যশোর খুলনা ক্লাবে তার একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই সুলতানের মাছিমদিয়ার বাড়িতে দি ইনস্টিটিউট অফ ফাইন আটর্স উদ্বোধন করেন। এমনকি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে-ঘুরে যুদ্ধের ছবি আঁকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিল্পী নিজ শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে।
১৯৭৬ সালে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে তার একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মুলত: এই প্রদশর্নীর মাধ্যমে এ দেশের সুশীল সমাজের তার নতুন ভাবে পরিচয় ঘটে।
এসএম সুলতান ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’, ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদকে’ ভূষিত হন। এছাড়া, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ সহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন।
বরেণ্য এই শিল্পী ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :