এদিকে ঠান্ডা তাপমাত্রা রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঠান্ডা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে থাকে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। শীতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শরীরের রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়। যা ত্বকের তাপমাত্রা কমিয়ে ধমনীতে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে কাঁপুনি, মেটাবলিক রেট বেড়ে যাওয়া, এমনকি হার্ট অ্যাটাকের সমস্যাও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সময়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে একটি সুস্থ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনশৈলীর খুব প্রয়োজন। তাই চলুন জেনে নিই শীতকালে হার্ট সুস্থ রাখতে আপনি যা করবেন-
সক্রিয় থাকুন
শীতকালে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বা নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এ সময় সক্রিয় থাকা শারীরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ইনডোর ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা সাঁতার কাটাতে নিযুক্ত হন। এটি আপনার হৃদ্পিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করবে।
পুষ্টিকর খাবার খান
হার্টের জন্য উপকারী খাদ্য বজায় রাখা সারা বছর অপরিহার্য, তবে শীতকালে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মৌসুমি ফল এবং শাক-সবজি খাওয়া, হাইড্রেটেড থাকার অভ্যাস রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভেষজ চায়ের মতো উষ্ণ তরল পান করলে তা আপনার জন্য প্রশান্তিদায়ক হতে পারে। এ সময় প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত স্ন্যাকস এবং অত্যধিক লবণ গ্রহণ সীমিত করুন। স্যামন, আখরোট, বেরি, পালং শাক এবং অ্যাভোকাডোর মতো খাবার আপনার প্রতিদিনের রুটিনে যোগ করুন।
হাইড্রেটেড থাকুন
শীতকালেও নিজেকে ভালোভাবে হাইড্রেটেড রাখুন। পানীয় জল ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা হৃদ্রোগের জন্য অপরিহার্য। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন
শীতকাল মানেই পিঠার উৎসব। আর এ সময় ঘরে ঘরে পিঠা তৈরি করা হয়। অনেক সময় আমরা এসব খাবার অনেক বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলি। এতে আমাদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আপনি যদি পরমিাণ মতো খাবার খান, সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। এ সময় অবশ্যই অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। একটি স্বাস্থ্যকর খাবার রুটিন মেনে চলুন এবং উচ্চ-ক্যালোরি, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ সীমিত করুন।
শীত মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে
শীতকাল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ঋতু হতে পারে, দিনের আলো কমে যাওয়া এবং ঠান্ডা তাপমাত্রা অলসতা বা ঋতুগত সংবেদনশীল ব্যাধি বাড়াতে পারে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক, কারণ দীর্ঘস্থায়ী চাপ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ধ্যান, যোগব্যায়াম বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো অভ্যাস বাড়াতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুমান
হার্ট ভালো রাখতে পর্যপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। কারণ এটি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়
গবেষণায় বলা হয়েছে যে, শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হতে পারে, যা রক্ত প্রবাহকে কঠিন করে তোলে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়। যথাযথ সতর্কতা ছাড়াই কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করলে তা হার্ট অ্যাটাককে ট্রিগার করতে পারে, বিশেষ করে যাদের হার্টে আগে থেকেই সমস্যা আছে।
ঠান্ডা বাতাস শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। হার্টের সমস্যা থাকলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা তা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। শীতকাল শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের বৃদ্ধির জন্য পরিচিত, যেমন ফ্লু এবং সাধারণ সর্দি। এই অসুখগুলো হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ঘন ঘন হাত ধোঁয়াসহ ভালো স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করা এবং ফ্লুর টিকা নেয়ার দিকে খেয়াল করুন। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করলে তা পরোক্ষভাবে হৃদ্রোগকে রক্ষা করতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
শীতকালে আপনার হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আপনার মতামত লিখুন :