কোমরব্যথা পরিচিত একটি সমস্যা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ ভুল দেহভঙ্গি বা কোমরের মেরুদণ্ডের চাপ। কিন্তু কোমরব্যথার কারণ হতে পারে জটিল বা ভিন্ন কিছু। যেমন হাড়ের টিবি বা যক্ষ্মা কিংবা ম্যালিগনেন্সি বা ক্যানসার। তাই সাধারণ কোমরব্যথার সঙ্গে কিছু খারাপ লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক থাকতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সন্দেহজনক লক্ষণ
ম্যালিগনেন্সি বা ক্যানসারের কারণে যে কোমরব্যথা হয়, সেটি সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের হয়। সে ব্যথা তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি হয়। কাজকর্ম ও বিশ্রামের সময়ও ব্যথা হয়, অনেক সময় রাতে রোগী ঘুমাতে বা বসতে পারেন না। এর সঙ্গে সঙ্গে ওজন হ্রাস, অরুচি দেখা দেয়। অনেক সময় রোগীর কোমরের হাড় ভাঙা বা প্যারালাইসিস হওয়ার পর্যায়ে চলে আসে। পা অচল হয়ে যায়। কারও কারও মল–মূত্রত্যাগে সমস্যা হয়।
বয়স্ক ব্যক্তিদের কোমরব্যথা হলে সর্তক থাকতে হবে। যেসব ক্যানসারে কোমরব্যথা দেখা দেয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাল্টিপল মায়লোমা। পুরুষের প্রস্টেট ক্যানসার থেকে অনেক সময় মেটাস্টাসিস হয়ে মেরুদণ্ডকে আক্রান্ত করে। কিডনি থেকেও হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট থেকে মেরুদণ্ড আক্রান্ত হতে পারে। আরও কিছু ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে কোমরব্যথা হতে পারে।
মূত্রাশয়ের ক্যানসার: পিঠের নিচের অংশে ব্যথা মূত্রাশয় ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এর সঙ্গে তলপেটে ব্যথা সাধারণত মূত্রাশয় ক্যানসারের লক্ষণ। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে আছে ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবে রক্ত ও প্রস্রাবের সময় ব্যথা।
মেরুদণ্ডের ক্যানসার: স্পাইনাল কর্ড ও মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্যানসারও পিঠের ব্যথার কারণ হতে পারে। যদিও এটি বিরল। মেরুদণ্ডে টিউমার হলে কোমরব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। মূত্রাশয় ক্যানসারের মতো মেরুদণ্ডের ক্যানসারের ক্ষেত্রেও পিঠে ব্যথা প্রাথমিক লক্ষণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যথা তীব্র হতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন হাত-পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মেরুদণ্ডের ক্যানসারের লক্ষণগুলোর মধ্যে অসাড়তা, দুর্বলতা, বাহু ও পায়ে দুর্বলতা এবং পক্ষাঘাতও অন্তর্ভুক্ত।
ফুসফুসের ক্যানসার: ফুসফুসের ক্যানসারের বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে একটি হলো কোমরব্যথা। আপনি যদি পিঠে ব্যথার সঙ্গে ফুসফুসের ক্যানসারের অন্য কোনো উপসর্গ লক্ষ করেন, অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণগুলো হলো কাশিতে রক্ত পড়া, অবিরাম শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, যা দুই বা তার বেশি সপ্তাহ ধরে থাকে।
করণীয়
ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে। প্রচুর ফল ও শাকসবজি খেতে হবে নিয়মিত। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ও ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে, কোমরব্যাথা কিছুতেই যদি না কমে, রাতে ঘুমাতে পারেন না, ওজন হ্রাস, অরুচি থাকলে সতর্ক হতে হবে।
• মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী, পরিচালক ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট, বিএলসিএস ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা
আপনার মতামত লিখুন :