Probas Report
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১

তালেবানের দ্বিতীয় যুদ্ধ জোরেশোরে শুরু

প্রবাস রিপোর্ট | আলতাফ পারভেজ এপ্রিল ৫, ২০২৩, ০৪:৫০ পিএম তালেবানের দ্বিতীয় যুদ্ধ জোরেশোরে শুরু

ন্যাটোর বিরুদ্ধে তালেবানের চূড়ান্ত বিজয়ের পর স্বতন্ত্র পরিচয়ে গেরিলা যোদ্ধাদল হিসেবে উত্থান ঘটছে আইএস-খোরাসানের।

আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট হামলা চালায় আইএস–খোরাসান। হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে আহতদেরছবি: রয়টার্স
আফগানিস্তানে তালেবান মহাশক্তিধর সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করেছে ২০২১ সালের আগস্টে। দুই বছর না পেরোতে নতুন করে আরেক শক্তির সামনে তাদের দাঁড়াতে হচ্ছে অস্ত্র হাতে। এবারের প্রতিপক্ষ ‘ইসলামিক স্টেট-খোরাসান’। সংক্ষেপে যে সংগঠনকে সবাই চেনে ‘আইএস-খোরাসান’ বা ‘আইএস-কে’ নামে। কেবল প্রান্তিক প্রদেশগুলোতে নয়, খোদ কাবুলে প্রতিদিন চোরাগোপ্তা গোলাগুলি চলছে এই দুই পক্ষে। ওয়াকিবহালদের মত, ক্রমে নতুন এক গৃহযুদ্ধে প্রবেশ করছে দেশটি।
সেকালের খোরাসানে একালের আইএস
ন্যাটোকে তাড়িয়ে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান প্রতিরোধের শঙ্কায় ছিল আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র পানশিরকেন্দ্রিক আহমদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন ‘নর্দার্ন এলায়েন্স’ বাহিনীর তরফ থেকে। কিন্তু ঘটেছে ভিন্ন। আঘাত হানছে ‘আইএস-কে’। সংগঠনটি ইরাক ও সিরিয়া অঞ্চলে ২০১৩-১৪ সালে গড়ে ওঠা ‘ইসলামিক স্টেট’-এর শাখা হিসেবে পরিচিত।
ভৌগোলিকভাবে খোরাসান নামটি একালে অনেককে বিভ্রান্ত করে। এ নামে ইরানে বিশাল এলাকা আছে, যা এখন তিনটি প্রদেশে বিভক্ত। এর বাইরেও পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নিয়ে ‘বৃহত্তর খোরাসান’ বলে মানুষের মুখে মুখে একটা জনপদ চিহ্নিত হয়ে আছে। ঐতিহাসিক সেই পুরো অঞ্চল ঘিরে ‘আইএস-খোরাসানে’র উপস্থিতি থাকলেও তাদের সশস্ত্র কাজের ভরকেন্দ্র এখন আফগানিস্তান। প্রায় আট বছর হলো এই শক্তি এই অঞ্চলে সক্রিয়। তবে ন্যাটোর বিরুদ্ধে তালেবানের চূড়ান্ত বিজয়ের পরই কেবল স্বতন্ত্র পরিচয়ে গেরিলা যোদ্ধাদল হিসেবে উত্থান ঘটছে এদের—আফগানিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তানেও।
জাতীয়তাবাদ বনাম খেলাফতপন্থা
ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের জনবলের প্রাথমিক উৎস ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টির সংগঠকেরা। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর সেখানে ধীরে ধীরে এ অবস্থা তৈরি হয়।
অন্যদিকে আইএস-খোরাসানের জন্ম ও বিকাশ পাকিস্তানের তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি এবং আফগানিস্তানের তালেবান কর্মীদের মধ্য থেকে। তবে এখন আফগান তালেবানের সঙ্গে আইএস-খোরাসানের সম্পর্ক অতি তিক্ত। তালেবান শক্তি চাইছে আইএস-খোরাসান আফগানিস্তানে তার সশস্ত্রতা বন্ধ করুক। যেহেতু আফগানিস্তানে এখন আর কোনো বিদেশি দখলদারত্ব নেই—সুতরাং সশস্ত্রতা হতে হবে আত্মরক্ষামূলক, আক্রমণাত্মক নয়। তালেবানের এ রকম অবস্থানে উভয় শক্তির সংঘাত বেধেছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় তালেবান ন্যাটোর মুখ্য শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন পৃষ্ঠার যে ‘চুক্তি’ শেষে কাবুলে ক্ষমতা পেল, তাতে আফগানিস্তানে ‘সন্ত্রাসী’ কাজ বন্ধের অঙ্গীকার ছিল। এ ছাড়া এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্যও তার আইএস-খোরাসানকে নিয়ন্ত্রণ জরুরি। দোহা চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি তালেবানের দায়বদ্ধতাকে আইএস-খোরাসান প্রচার করছে আপসকামী কাজ হিসেবে। এই প্রচারের মাধ্যমে তারা ধর্মভীরু আফগানদের মধ্যে তালেবানকে অজনপ্রিয় করার কৌশল নিয়েছে। এ ছাড়া আইএস-খোরাসান তালেবানকে ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে তুলে ধরে নিজেদের আন্তর্জাতিক খেলাফতপন্থী দেখাতে আগ্রহী। আইএস-খোরাসানের এ রকম মতামত আফগানিস্তানে থাকা বিদেশের গেরিলাদের জন্যও সুবিধাজনক।
আইএসের হামলা থামানো তালেবানের জন্য দুরূহ
এ অঞ্চলে আইএস-খোরাসানের সবচেয়ে বড় হামলা ছিল পাকিস্তানের বানু এবং মাসতাঙ্গে। ২০১৮ সালে ওই এক হামলায় প্রায় দেড় শ মানুষ মারা যায়। এরপর বড় আকারের তৎপরতা না চালালেও সম্প্রতি আফগানিস্তানে তাদের সামরিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। গত ১০ মার্চ তাদের হাতে বালখ্ প্রদেশের গভর্নর মৌলভি দাউদ মুজাম্মিল তাঁর দপ্তরে নিহত হন।
২৭ মার্চ তারা কাবুলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হামলায় সাত ব্যক্তিকে হত্যা করে। একই মন্ত্রণালয় লক্ষ্য করে কাছাকাছি স্থানের আরেক আক্রমণে ১১ জানুয়ারি আরও ১০ ব্যক্তিকে হত্যা করে আইএস-খোরাসান। ১ জানুয়ারি কাবুলের সামরিক একটি বিমানঘাঁটিতে তাদের অপর হামলায় ২০ ব্যক্তি মারা যায়। ডিসেম্বরে ৫ চীনা নাগরিকের ওপর হামলা হয়। সেপ্টেম্বরে রুশ দূতাবাসের দুই কর্মীকে হত্যা করা হয়।
এসব হামলা ক্ষমতাসীন তালেবানের জন্য খুব বিব্রতকর। এতে এ রকম ধারণাই তৈরি হচ্ছে—আফগান মাটিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ নয়। আবার নিরাপত্তাহীনতা যত বাড়ছে—বিদেশি সাহায্য এবং বিনিয়োগ আসাও তত অনিশ্চিত হচ্ছে। দেশ চালাতে তালেবান প্রশাসনের এই উভয় বিষয় খুব দরকার। চীন ও রুশ নাগরিকদের ওপর হামলার মাধ্যমে আইএস-খোরাসান বেইজিং ও মস্কোকে যে বার্তা দিয়েছে, সেটা তালেবানের জন্য খুবই বিধ্বংসী।
মাঠে আইএস-খোরাসান মোটেই নিয়মিত বাহিনীর মতো আচরণ করছে না। অধিকাংশ হামলা হচ্ছে আত্মঘাতী যোদ্ধাদের দ্বারা। এ রকম প্রতিপক্ষকে রুখতে পারা যেকোনো নিরাপত্তাব্যবস্থায় দুরূহ। সাম্প্রতিক আত্মঘাতী যোদ্ধাদের সংগ্রহ করা হচ্ছে তাজিক জনগোষ্ঠী থেকে।
এ অধ্যায়ের আরেক কৌতূহলোদ্দীপক দিক—আইএস-খোরাসানকে দমাতে তালেবান যেমন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সহায়তা চাইছে—একইভাবে পাকিস্তান নিজস্ব তালেবানকে (টিটিপি) থামাতে আফগান সরকারের মদদ চাইছে। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে কাবুলের তালেবানের গোয়েন্দা সংস্থা জেনারেল ডিরেক্টর অব ইন্টেলিজেন্সের (জিডিআই) ১০ সদস্যের একটা প্রতিনিধিদল গোপনে এসে এসব নিয়ে কথা বলে গেল পাকিস্তানে। জিডিআই প্রধান আবদুল্লাহ গজনবিও ছিলেন দলে।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র
পাকিস্তানের জন্য আইএস-খোরাসান গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো। ধর্মভিত্তিক সশস্ত্র জোট তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপিকে মোকাবিলায় দেশটির বিভিন্ন বাহিনী খুব নাজেহাল অবস্থায় আছে। আইএস-খোরাসানের আক্রমণ টিটিপির চেয়েও নির্মম। টিটিপি ও আইএস-খোরাসানের তৎপরতা পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেমন নাজুক করে তুলেছে, তেমনি এতে আফগান সরকারের সঙ্গে তাদের অবিশ্বাস জন্মাচ্ছে। ইসলামাবাদে রাজনীতিবিদেরা মনে করেন, এই উভয় শক্তি কাবুলের সমর্থন ও সহযোগিতা পায়। কাবুলে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তান ভেবেছিল তার ওই সীমান্ত নিরাপদ হলো। বাস্তবতা হলো, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে দেশটিতে টিটিপি ও আইএস-খোরাসানের সশস্ত্রতা ২৭ শতাংশ বেড়েছে (এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩)।
আফগানিস্তান ও আশপাশের দেশে আইএস-খোরাসানের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে তার উদ্বেগের কথা বলছে। ২০২১ সালের তথ্য-উপাত্তের আলোকে তারা মনে করে আফগানিস্তানে আইএস-খোরাসানের ২-৩ হাজার গেরিলা সক্রিয় আছে। যাদের অন্তত অর্ধেক ন্যাটো বাহিনী থাকার সময় বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ছিল। তালেবান আমলে কারাগারগুলো খুলে দেওয়ায় এরা ছাড়া পায়। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র আইএস-খোরাসানের এখনকার উত্থানের জন্য তালেবানকে দায়ী করছে।
ক্রমাগত এ রকম দাবির মুখে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তালেবান জিডিআই এক অভিযানে—তাদের ভাষায়, আফগানিস্তানে আইএস-খোরাসানের গোয়েন্দাপ্রধান কারি ফাতেহকে হত্যা করেছে। কারি ফাতেহ আফগানিস্তানের পাশাপাশি সংগঠনটির ভারত এবং ইরান শাখারও গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পক ছিলেন বলে ২০২২ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল। ১৪ ফেব্রুয়ারি তালেবান সংগঠনটির আরেক কমান্ডার ইজাজ আমি আঙ্গারকেও হত্যা করে।
আইএস–কের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাঈদ খানকে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালের আগস্টে এক বিমান হামলায় আফগানিস্তানের নানাগওহর প্রদেশ হত্যার দাবি করেছিল। তবে এরপরও সংগঠনটি নেতৃত্ববিহীন নেই এবং তার বিকাশও যে থেমে নেই, তালেবানবিরোধী তৎপরতা সে সাক্ষ্য দিচ্ছে। বর্তমানে অজ্ঞাত জায়গা থেকে এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সানাউল্লাহ গাফারি। সাহাব আল-মুহাজির নামেও তিনি পরিচিত। সাহাব একজন আরব। যা সাক্ষ্য দেয়, আফগানিস্তানে এখনো অনেক বিদেশি যোদ্ধা রয়ে গেছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে বলাবলি করছে, আইএস-খোরাসান আগামী ছয় মাসের মধ্যে ওয়াশিংটনের স্বার্থের ওপর আঘাত হানতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান ২৩ মার্চ ফরেন পলিসিতে এবং ২৪ মার্চ টুইটারে এটা নিয়ে লিখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এ রকম অনুমানের অন্তত একটা ভিত্তি হলো আর্থসামাজিক হতাশা থেকে অনেক তালেবান যোদ্ধা আইএস-খোরাসানের দিকে যাচ্ছে। এর সামরিক তাৎপর্য হলো এসব যোদ্ধার মাধ্যমে খুব সহজে তালেবানের ভেতরের খবর আইএসের হাতে চলে যাচ্ছে ক্রমাগত।
পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে
তালেবানের পক্ষে আইএস-খোরাসানকে মোকাবিলা খুব সহজ নয়। প্রথমত, উভয় শক্তির আদর্শ প্রায় একই রকম। বৈরিতাটা মূলত কৌশলগত। এ রকম সম-আদর্শের মানুষদের হত্যার নৈতিক ন্যায্যতা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা তালেবানের পক্ষে কঠিন। আবার এটাও সত্য, সংগঠনটি তাদের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করছে, প্রশাসন পরিচালনা কঠিন করে তুলছে। এদের কাজ আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসকবলিত দেশ হিসেবেই পরিচিত করে রাখছে, যা এখন আর তালেবানের কাম্য নয়।
তবে আইএস-খোরাসান সমস্যা দমনের নামে তালেবান আন্তর্জাতিক সহানুভূতিও কাড়তে চায়। অর্থাৎ একে ব্যবহার করে নিজেদের শান্তিপূর্ণ ভাবমূর্তি গড়ে তোলারও সুযোগ নিতে চাইছে তালেবান। রাশিয়া ও চীন আইএস-খোরাসানকে থামাতে তালেবানের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। এ সূত্রে তালেবানের সঙ্গে ভারতেরও নৈকট্য বাড়ছে, যা অনেকের কাছে অভাবনীয় ছিল। যুক্তরাষ্ট্র যে প্রায় নীরবে তালেবানের সঙ্গে ‘বন্দী’ বিনিময় করছে, সে–ও এ পর্যায়ে কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়। পাঁচ-ছয় মাস আগে এ রকম এক ‘বিনিময়ে’র ভেতর দিয়েই ওয়াশিংটনের হাত থেকে ছাড়া পেলেন বশির নুরজাই।
নিন্দুকেরা তাঁকে আফগানিস্তানে মাদক উৎপাদনের গুরু বলে থাকে। তালেবানের কাছে তিনি ছিলেন অর্থের অন্যতম উৎস। তালেবানের হাতে বন্দী নিজস্ব এক সৈনিককে ছাড়ানোর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র বশির নুরজাইকে ছেড়েছে বৃহত্তর এক বিবেচনায়। কান্দাহারের ‘নুরজাই’ ট্রাইবে বশিরের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তালেবানের ওপর মহল গড়ে উঠেছে নুরজাইদের নিয়ে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক কাছাকাছি আসতে দেখলে অনেকেই নিশ্চিতভাবে বশির নুরজাইর কথা স্মরণ করবেন তখন।
আফগান পরিস্থিতির নতুন এই বাঁকবদলের সময়ে আইএস-খোরাসানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার ফলাফল বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। তারা তালেবানের হাত থেকে আফগান সমাজের নেতৃত্ব নিতে চায়, যাতে অঞ্চলটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামিক এস্টেটের প্রধান ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ তালেবান দ্বারা আফগান মাটি থেকে ন্যাটোকে তাড়ানোর ‘সুবিধা’ নিতে চায় তারা।
ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের চাপের মুখে আইএস-খোরাসানের নেতৃত্বের জন্য একটা ‘নিরাপদ অঞ্চল’ দরকার এখন। আফগানিস্তানের ভৌগোলিক গঠন এবং সামাজিক পরিস্থিতি এ রকম লক্ষ্যের সঙ্গে মানানসই। নানগারহর এবং কুনার প্রদেশে তাদের ইতিমধ্যে ভালোই উপস্থিতি দাঁড়িয়েছে।
আইএস-খোরাসান একই সঙ্গে পাকিস্তানে নুর ওয়ালি মেসুদের নেতৃত্বাধীন টিটিপি প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতেও সংগঠন শক্তিশালী করতে চাইছে। তাদের তৎপরতা পাকিস্তান প্রশাসনের সঙ্গে তালেবান প্রশাসনের সম্পর্ককেও চাপে রাখতে চায়। এতে তালেবান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওয়া কূটনীতিক সহায়তাও হয়তো আর আগের মতো পাবে না। তালেবানের সম্ভাব্য ওই নিঃসঙ্গতায় আফগান জমিনে আইএস-খোরাসানের বিকাশ সহজ হতে পারে।
গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রশাসনিক দুর্নীতি অনেক কমে এলেও এবং আমদানি-রপ্তানি বাড়তে থাকলেও খাদ্যাভাবের মতো সমস্যায় তালেবান কর্মীসহ স্থানীয় অনেকে অসন্তোষ প্রকাশের বিকল্প কাঠামো হিসেবে আইএস-খোরাসানকে পছন্দ করতে পারে ধীরে ধীরে।
আবার মাঠপর্যায়ে সংগঠনটির উপস্থিতি যত বাড়বে, তালেবানের পক্ষে অতিরক্ষণশীল সামাজিক নীতি থেকে সরে আসাও অসম্ভব হবে। নারীশিক্ষা এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের প্রতি তালেবান এখন যে অবস্থান নিয়ে আছে, তা আইএস-খোরাসানের কাছে সমালোচিত হওয়ার ভয়েও।
এ রকম বিষয় আবার তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে মতভিন্নতাও বাড়াচ্ছে বলে কাবুলে গুঞ্জন আছে। বর্তমানে পুরো প্রশাসন কান্দাহারের হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদার কঠোর নিয়ন্ত্রণে আছে। সে জন্য অনেকে আফগানিস্তানের ‘রাজনৈতিক রাজধানী’ হিসেবে কান্দাহারের উল্লেখ করেন।
কিন্তু কাবুলে উপপ্রধানমন্ত্রী আবদুল গনি বারদার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাওলানা ইয়াকুবকে ঘিরে তিনটি উপদলও রয়েছে। প্রথমোক্ত দুজন নারীশিক্ষা বা প্রচারমাধ্যম বিষয়ে চলতি নীতি নিয়ে ভিন্নমতাবলম্বী হলেও হাইবাতুল্লাহর কান্দাহার থেকে আসা সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। এ ছাড়া হাইবাতুল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করতে সব উপদলের মধ্যে যে ঐক্য ও সমঝোতা দরকার, সেটা দুরূহ।
তবে আইএস-খোরাসানের তৎপরতা বাড়তে থাকলে এবং পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা যদি না পাওয়া যায়, তাহলে হাইবাতুল্লাহর ওপর শাসননীতি সংস্কারের চাপ বাড়বে। পাকিস্তান, কাতারসহ তালেবানের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলো সে রকমই চাইছে।
•    আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ে গবেষক

Side banner